ফাঁকা ট্রেনের রহস্য
কবি বিশ্বাস (Ami Kobi Biswas Bolche)
কবি বিশ্বাস (Ami Kobi Biswas Bolche)
#রাত তখন প্রায় দশটা, ভাবলাম আজ শেষ ট্রেনে বাড়ি ফিরবো; সকাল থেকে অফিস এর অনেক চাপ সামলাতে হয়েছে। তাই বিকালটা থেকে গেলাম বন্ধুর বাড়িতে, তবে বেশ, সুন্দর প্রকৃতি এখনকার । দেখে এক প্রকার মুগ্ধ আমি। তার পর দুপুর এর খাওয়া দাওয়া বেশ ছিল। খাবার পর বন্ধু সাথে সাইকেলটা নিয়ে ছুটলাম নদীর পারে, আহা হা হা; কি সুন্দর দৃশ্য, অবাঞ্চিত এই চোখ দুটো আজ যেন স্বর্গ দেখছে। এক অজানা হওয়া যেন পাগল হয়ে যাচ্ছি প্রতি ক্ষনে ক্ষনে, হেমন্ত ঋতুর দক্ষিনা বাতাস আর নদীর জলের গন্ধ যেন নেশা লাগিয়ে দিয়েছে আমার সারা শরীরে।
#কখন যে সাঁঝ নেমে আসছিলো জানিনা, প্রকৃতির মদকীয়তায় দুইবন্ধু কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা। ঘুম ভাঙতেই দেখি বন্ধু হা করে চেয়ে রয়েছে। কি জানি কি দেখছে ওই অন্ধকারে, আমার হটাৎ করেই চোখ গেলো ওপারে, দেখি এক নারী নদীতে স্নান করেছে, আমিও এই নিয়ে বন্ধুর সাঁথে ঠাট্টা তামাশা করছি। কিন্তূ হটাৎ করেই চোখ সরাতে মেয়েটা কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলো। এইতো ছিল হটাৎ করে উধাও; বিষয়টা একবারেই ধাতস্থ হতে পারলাম না।ওদিকে রাত বাড়ছে বাড়ি ফিরতে হবে তাই বিষয়টাকে ওই খানেই ধামাচাঁপা দিয়ে ফিরে আস্তে হল।
#বন্ধুর বাড়ি যেতেই, কাকিমা বলে উঠলেন, আজ বাবা তোমার বাড়ি যেতে হবেনা, আজ বরঞ্চ এখানেই থেকে যাও তোমার বন্ধু প্রভাত এর সাথে, যা কথা প্রসঙ্গ বলা হয়নি আমার বন্ধুটির নাম প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। এবং আমার নাম হেমন্ত দাসগুপ্ত। সরকারি কর্মচারী আমি, মাঝে সাঝে লেখালেখিও করে থাকি মাঝে মাঝে।
#খুব কষ্ট করে কাকিমাকে বোঝাতে হল বাড়ি আজ ফিরতে হবে তাই বেশি কথা না বলে বেড়িয়ে পড়লাম স্টেশন এর দিকে। গ্রামগঞ্জ এলাকা তাই বন্ধু এগিয়ে দিয়ে গেলো স্টেশন অবধি, তারপর স্টেশনে পা রাখতেই দেখি গা ছমছমছে একলা স্টেশন। কেউ নেই কথা শুধু আমি একা, অপেক্ষায় শুধু এই লাইনের শেষ ট্রেন।
#কেমন যেন দমবন্ধ করা পরিবেশ চারিদিকে, যাই হোক ট্রেন আস্তে যেকোনো মিনিটঃ পাঁচেক; এক প্রকার ভয় দানা বাঁধছিলো মনের কোন! বেশি কিছু না ভেবে চুপটি করে বসে রইলাম। কেমন যেন সব অচেনা লাগতে লাগলো আমার কাছে, তবে ট্রেন এর হুইসেল শুনে মন একটু শান্ত হল যাক বাবা এবার আর কোনো চিন্তা নেই। ট্রেনে উঠেই সোজা বাড়ি!
#খুব আনমনা ভাবেই ট্রেন থামতেই তরিজরি করে উঠে পড়লাম। উঠতেই চোখ আরো ধাঁধিয়ে গেলো, কি ঘটছিল আমার সাথে কিছু বুজতে পারছিলাম না, পুরো ট্রেনের কামরাটা ফাঁকা কেউ নেই, আমি পুরো হতো ভম্ভো হয়ে বসে পড়লাম সিটে। বুজতে পারছি গায়ের লোমগুলো কেমন যেন খাড়া হয়ে যাচ্ছে। আর মরা কপাল ভাবনা চিন্তা গুলো এমন; তখনি ওই নদীর ঘাটের ওই মেয়েটার কথা; বেশি করে মনে পড়তে লাগলো। কি করে উধাও হয়ে গেলো মেয়েটা। তাঁর মধ্যে ট্রেনটা হটাৎ পরেরস্টেশন আসতেই!সমস্ত ট্রেনের আলোগুলো নিভে গেলো......
#আমার প্রায় প্রানটা অধেক হয়ে গেছিলো। জয় মা কালী; জয় দূর্গা আরো কত কি আতরেছি ওই দুই মিনিটে; বুকের ধুকপুকানি প্রায় চরম মাত্রায়, এই ফাঁকা ট্রেনে শুধু আমি একই যাত্রী। মনে মনে ভগবানকে ডাকছি কোনো মতে বাড়ি ফিরতে পারলে হয়; আর বাবা এসব না এই শেষ ট্রেনে,মায়ের একমাত্র ছেলে আমি তার পর এখনো বিয়ে করিনি; এত তাড়াতাড়ি মরতে চাইনা আমি। হে প্রভু বাঁচও আমাকে বলতে বলতে হটাৎ ট্রেনের প্রচন্ড জোরে হুইসেল, আচমকা শুনে, সিটের উপর লাফ মেরে উঠে পরি। গলা শুকিয়ে আসছে তেষ্টাও পেয়েছে মারাত্মক। ওদিকে ইয়ে পেয়ে গেছে জোরটার; প্রানটা বেরিয়ে গেলো মাগো। হঠাই ট্রেনটা আবার চলতে শুরু করলো; গলা শুকিয়ে জিভ একেবারে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে কাকিমার কথা শুনে রাতটা বন্ধুর বাড়িতে থেকে গেলে হয়তো ভালো হতো।
#এ কেমন আজব ট্রেনরে বাবা, কেউ কোথাও নেই, কোনো যাত্রী নেই। হটাৎ করে ক্যারাট আসতেই, চোখের সামনে দেখি রূপবতী মহিলা দাঁড়িয়ে, আমিতো প্রায় ভূত ভূত বলে চেচিয়ে উঠেছিলাম। এতটা হাঁফাতে শুরু করেছি যেন মনে হচ্ছে ১০কিলোমিটার দৌড়ে এসেছি, বাবাগো কে আপনি!(প্রায় হাঁফাতে হাঁফাতে বলছি) মহিলাটাও আঁতকে উঠে বলছে কে মশাই আপনি মেয়েদের মতো চেঁচাচ্ছেন কেন? আমাকে দেখে কি আপনার ভূত বলে মনে হচ্ছে (মহিলাটা প্রায় রেগে গিয়ে),কি মশাই আপনি ব্যাটাছেলে না মেয়েছেলে, এই ভাবে অভদ্র-র মতো চেঁচায় কেউ? না মানে ইয়ে! কি ইয়ে থাবড়ে গাল লাল করে দিবো মস্করা হচ্ছে আমার সাথে। উনিতো জাতা বলে গেলেন। কিন্তু আমিতো জানি ভয়ে আমার পুরো বেরিয়ে যাচ্ছে। যাই আমি কিছু বলছি না শুনে নিজেই চুপ চাপ বসে পড়লেন।
#ইচ্ছা করলেও জল খাবার উপায় নেই। ওদিকে আবার ইয়ে পেয়ে গেছে। কি যে করি তার উপর এই রাগী মহিলা! হে প্রভু বাঁচও আমাকে, পরের স্টেশনে ট্রেন থামতেই আগে গিয়ে একটু হালকা হয়ে নিলাম। তারপর ট্রেনে উঠে জল খেয়ে নিলাম; আহা কি শান্তি যেন এক প্রকার প্রাণ ফিরে এলো। মাগো কি শান্তি। আমার এই নাজে হাল অবস্থা দেখে মেয়েটি আমাকে বলতে লাগলো! ঠিক আছেন আপনি; কি হয়েছে এত ভয় পাচ্ছেন কোনো? আমার গলায় তো কোন সারা নেই, শুধু ইয়ে ইয়ে করে যাচ্ছি। অরে ধুর মশাই খামুনতো তখন থেকে ইয়ে ইয়ে করে যাচ্ছেন কথা বলতে পারেন না নাকি? নাকি ফাঁকা ট্রেনে একটা একলা একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে আপনার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে । আরে হয় হয় এমনটা হয় আমি জানি। আমিও মনে মনে বলছি; (ঘন্টা জানেন আপনি, আমার ভয়তে বেরিয়ে যাচ্ছে আর আমি নাকি এখন মেয়ে দেখতে বসবো) না মানে একা ছিলামতো তাই আপনাকে হটাৎ দেখে একটু ইয়ে মানে একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম। দেখুন আমার একটা নাম আছে। আমার নাম আছে, আমার নাম উর্মিলা রায়।আপনার নাম কি? আমার নাম হেমন্ত দাসগুপ্ত।
#উর্মিলা :- তা এই রাতে আপনাকে ট্রেনে চাপতে কে বলেছে শুনি?
#হেমন্ত :-বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম অফিস থেকে ফেরার পথে। আর আপনি?
#উর্মিলা :-আমি আমার দিদির বাড়ি এসেছিলাম।
#হেমন্ত :- আসলে এই ফাঁকা ট্রেনে আপনাকে হটাৎ করে দেখে একপ্রকার ভয় পেয়ে গেছিলাম, এমনিতে গ্রাম অঞ্চল এলাকা তার উপর আবার রাতের শেষ ট্রেন। ফাঁকা স্টেশন তার উপর এই ফাঁকা কামরা। আপনাকে হটাৎ দেখে আমার প্রানটা বেরিয়ে গেছিলো প্রায়।
#উর্মিলা :- তা মশাই কোথায় যাবেন আপনি?
#হেমন্ত :-আমি হাওড়া যাবো আর আপনি ?
#উর্মিলা :-আমিও ওই ওই হাওড়া। তা হেমন্ত বাবু আপনার নামটা ভারী বেশ; ওই একটা কবি কবি ব্যাপার আছে কিন্তু ছন্দ ছাড়া (বলে মেয়েটা হাসতে লাগলো)
#হেমন্ত :-আহা আপনার যে হাসি দেখছি থামছে না। তা এত হচ্ছেন কেন?
#উর্মিলা :-না হেসে কি আর থাকা যায়। আপনি একজন পুরুষ মানুষ হয়ে মেয়েদের মতো ভয় পাচ্ছেন আবার বলছেন হাসছেন কোনো। কি আমিও তো অঙ্ক ক্ষণ ধরে একা স্টেশন বসে ছিলাম আমি তো আপনার মতো করছি না, ধান্দা কি আপনার সুন্দরী মেয়ে দেখে কি পটানোর চেষ্টা করছেন। এই আপনার মতো এই ধান্দা বাজ ছেলেদের আমার জানা আছে। যেই দেখেছেন একা সুন্দরী মেয়ে অমনি শুরু হয়ে গেছেন। এই আপনাকে যত দেখছি তত চোর চোর মনে হচ্ছে। এত রাতে ধান্দাটা কি আপনার বলুনতো?
#হেমন্ত :-হায় ভগবান এই ছিল কপালে। শেষ পর্যন্ত চোর লাগছে আমাকে।
#উর্মিলা :-নানা আমি আপনাকে অপমান করার জন্য কিছু বলিনি । মানে মনে হল তাই বলে ফেললাম।
#হেমন্ত :-বা আপনি তো আমাকে জাতা বলছেন । হে বলুন হাতি কাঁদায় পড়লে চামচিকিতেও লাথি মারে। সবই আমার কপাল, সকাল যে কার মুখ দেখে উঠেছিলাম।
#উর্মিলা :-ভূতের স্বপ্ন দেখে উঠেছেন মনে হয়। হয়তো দেখেছেন একটা ভূত; সুন্দরী মেয়ে সেঁজে আপনার সাথে এক ট্রেনে যাত্রা করছে।
#হেমন্ত :-দেখুন আপনি খুব মজা পাচ্ছেন বলুন না আমাকে এত ভয় পেতে দেখে । তার উপর এই সব মন গড়া কথা শোনাচ্ছেন আমাকে ভয় দেখানোর জন্য। আপনি তো ভারী দুস্টু মেয়ে।
#উর্মিলা :-নানা আমিতো দুস্টু ভূত ।
#হেমন্ত :-দেখুন কাজটা আপনি কিন্তু ভালো করছেননা।এক জন অসহায় কে আরো অসহায় করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন।
#উর্মিলা :-আমি দেখায় কি আপনি ভয় পাবেন? আচ্ছা গলাটা পাল্টে যদি একটু ভূতের মতো করে কথা বলি। তার পর চুলটা ছেড়ে যদি এলোমেলো করে দেই।
#হেমন্ত :-দেখুন খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু?
#উর্মিলা :-খারাপ; কোথায় খারাপ হবার আর কি করলাম। আপনি আমাকে দুস্টু বলেন তাই একটু দুষ্টমি করার চেস্টা করছিলাম আর কি।
#হেমন্ত :-থাক আপনাকে আর দুস্টুমি করতে হবে না। আপনি এবার ভালো মেয়ে হয়ে চুপ চাপ বসুনতো। তা আপনাকে তো সত্যি খুব সুন্দর দেখতে; তা এত কথা বলেন কেন? আচ্ছা আপনার সাথে দেখা হয়েছে কিছু ক্ষণ আগে। আর আপনি আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছেন যেন কত দিন ধরে চেনেন আমাকে।
#উর্মিলা :-আসলে ভাবলাম এই ফাঁকা ট্রেনে একা বসে বোর হবার থেকে আপনার সাথে একটু আড্ডা দেই । কিন্তু আপনি মনে হয় চাইছেন না যে আমি এখানে থাকি! তাহলে এক কাজ করি আমি বরং পাসের কামরায় চলে যাচ্ছি ।
#হেমন্ত :-আরে নানা আমি তা একদমই বলতে চাইনি। আপনি থাকুন এখানে আমি ঠিক আছি। আমার কোনো অসুবিধা নেই।
#উর্মিলা :-অসুবিধা নেই নাকি, একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে প্রেমে পরে গেছেন। সোজা কথা ছেলেরা শিকার করে না সেটা আমি জানি। কি হেমন্ত বাবু প্রেমে পড়েছেনতো আমার! হে জানি এখন কি বলবেন, এমন কিছু না। তবে যাই বলুননা কেনো আমি জানি আমি চলে গেলে আপনি আমাকে মিস করবেন সেটা আমি জানি।
#উর্মিলা :- তা এই রাতে আপনাকে ট্রেনে চাপতে কে বলেছে শুনি?
#হেমন্ত :-বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম অফিস থেকে ফেরার পথে। আর আপনি?
#উর্মিলা :-আমি আমার দিদির বাড়ি এসেছিলাম।
#হেমন্ত :- আসলে এই ফাঁকা ট্রেনে আপনাকে হটাৎ করে দেখে একপ্রকার ভয় পেয়ে গেছিলাম, এমনিতে গ্রাম অঞ্চল এলাকা তার উপর আবার রাতের শেষ ট্রেন। ফাঁকা স্টেশন তার উপর এই ফাঁকা কামরা। আপনাকে হটাৎ দেখে আমার প্রানটা বেরিয়ে গেছিলো প্রায়।
#উর্মিলা :- তা মশাই কোথায় যাবেন আপনি?
#হেমন্ত :-আমি হাওড়া যাবো আর আপনি ?
#উর্মিলা :-আমিও ওই ওই হাওড়া। তা হেমন্ত বাবু আপনার নামটা ভারী বেশ; ওই একটা কবি কবি ব্যাপার আছে কিন্তু ছন্দ ছাড়া (বলে মেয়েটা হাসতে লাগলো)
#হেমন্ত :-আহা আপনার যে হাসি দেখছি থামছে না। তা এত হচ্ছেন কেন?
#উর্মিলা :-না হেসে কি আর থাকা যায়। আপনি একজন পুরুষ মানুষ হয়ে মেয়েদের মতো ভয় পাচ্ছেন আবার বলছেন হাসছেন কোনো। কি আমিও তো অঙ্ক ক্ষণ ধরে একা স্টেশন বসে ছিলাম আমি তো আপনার মতো করছি না, ধান্দা কি আপনার সুন্দরী মেয়ে দেখে কি পটানোর চেষ্টা করছেন। এই আপনার মতো এই ধান্দা বাজ ছেলেদের আমার জানা আছে। যেই দেখেছেন একা সুন্দরী মেয়ে অমনি শুরু হয়ে গেছেন। এই আপনাকে যত দেখছি তত চোর চোর মনে হচ্ছে। এত রাতে ধান্দাটা কি আপনার বলুনতো?
#হেমন্ত :-হায় ভগবান এই ছিল কপালে। শেষ পর্যন্ত চোর লাগছে আমাকে।
#উর্মিলা :-নানা আমি আপনাকে অপমান করার জন্য কিছু বলিনি । মানে মনে হল তাই বলে ফেললাম।
#হেমন্ত :-বা আপনি তো আমাকে জাতা বলছেন । হে বলুন হাতি কাঁদায় পড়লে চামচিকিতেও লাথি মারে। সবই আমার কপাল, সকাল যে কার মুখ দেখে উঠেছিলাম।
#উর্মিলা :-ভূতের স্বপ্ন দেখে উঠেছেন মনে হয়। হয়তো দেখেছেন একটা ভূত; সুন্দরী মেয়ে সেঁজে আপনার সাথে এক ট্রেনে যাত্রা করছে।
#হেমন্ত :-দেখুন আপনি খুব মজা পাচ্ছেন বলুন না আমাকে এত ভয় পেতে দেখে । তার উপর এই সব মন গড়া কথা শোনাচ্ছেন আমাকে ভয় দেখানোর জন্য। আপনি তো ভারী দুস্টু মেয়ে।
#উর্মিলা :-নানা আমিতো দুস্টু ভূত ।
#হেমন্ত :-দেখুন কাজটা আপনি কিন্তু ভালো করছেননা।এক জন অসহায় কে আরো অসহায় করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন।
#উর্মিলা :-আমি দেখায় কি আপনি ভয় পাবেন? আচ্ছা গলাটা পাল্টে যদি একটু ভূতের মতো করে কথা বলি। তার পর চুলটা ছেড়ে যদি এলোমেলো করে দেই।
#হেমন্ত :-দেখুন খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু?
#উর্মিলা :-খারাপ; কোথায় খারাপ হবার আর কি করলাম। আপনি আমাকে দুস্টু বলেন তাই একটু দুষ্টমি করার চেস্টা করছিলাম আর কি।
#হেমন্ত :-থাক আপনাকে আর দুস্টুমি করতে হবে না। আপনি এবার ভালো মেয়ে হয়ে চুপ চাপ বসুনতো। তা আপনাকে তো সত্যি খুব সুন্দর দেখতে; তা এত কথা বলেন কেন? আচ্ছা আপনার সাথে দেখা হয়েছে কিছু ক্ষণ আগে। আর আপনি আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছেন যেন কত দিন ধরে চেনেন আমাকে।
#উর্মিলা :-আসলে ভাবলাম এই ফাঁকা ট্রেনে একা বসে বোর হবার থেকে আপনার সাথে একটু আড্ডা দেই । কিন্তু আপনি মনে হয় চাইছেন না যে আমি এখানে থাকি! তাহলে এক কাজ করি আমি বরং পাসের কামরায় চলে যাচ্ছি ।
#হেমন্ত :-আরে নানা আমি তা একদমই বলতে চাইনি। আপনি থাকুন এখানে আমি ঠিক আছি। আমার কোনো অসুবিধা নেই।
#উর্মিলা :-অসুবিধা নেই নাকি, একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে প্রেমে পরে গেছেন। সোজা কথা ছেলেরা শিকার করে না সেটা আমি জানি। কি হেমন্ত বাবু প্রেমে পড়েছেনতো আমার! হে জানি এখন কি বলবেন, এমন কিছু না। তবে যাই বলুননা কেনো আমি জানি আমি চলে গেলে আপনি আমাকে মিস করবেন সেটা আমি জানি।
এত কথার মাঝে পরের স্টেশনটা এসে গেলে। আমি ভাবতে লাগলাম আর কিছু ক্ষণ তার পৌঁছে যাবো। কিন্তু তখনি হটাৎ এবার কারেন্ট চলে গেলে ট্রেনের। কারেন্ট আসতেই দেখি।
#কারেন্ট আসতেই দেখি মেয়েটা উধাও।কোথাও, নেই এইতো ছিল সামনে কোথায় যে উধাও হয়ে গেলো। এবার সত্যি সত্যি ভয়ে হাতপা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।কোথায় গেলো মেয়েটা। উর্মিলা আপনি কোথায় চলে গেলেন। আমাকে কি আবার ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছন বুঝি। দেখুন অনেক হয়েছে এই ছেলে মানুষই কোথায় আছেন দয়া করে বাইয়ে আসুন। আমি আপনাকে আর কিছু বলবো না। এবার দয়া করে বেরিয়ে আসুন। উর্মিলা, উর্মিলা আপনি কোথায় গেলেন(কাঁপতে কাঁপতে ভাবতে লাগলাম) তার হটাৎ-ই, ট্রেনটা খুব জোরে চলা সুর হলো। গম গম কি প্রচন্ড শব্দ যেন মনে হচ্ছে। চারিদিক ফেটে অন্ধকার আমাকে গ্রাস করতে আসছে।অনেক ক্ষণ হয়ে গেলো ট্রেনটা চলছে তো চলছে আর কোনো স্টেশন-ই আসছেনা, ভয় যেন আরো বেশি করে বেড়ে যাচ্ছে। তার পর হটাৎই শুনতে পেলাম একটা মেয়ের গলা! কে যেন একটা গান করছে, কিন্তু কোথাও তো কেউ নেই; ক্রমশ আওয়াজটা যেন আমার খুব কাছে আসছে; হটাৎ করে ঘাড়ের কাছে একটা গম্ভীর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি , গলা আবারো শুকিয়ে আসছে, বরে বরে শুনতে পাচ্ছি বাঁচও, বাঁচও ,বাঁচও আমাকে, খুব ভারী গলায় কেউ যেন বলছে আমাকে বাঁচও। আমার সাহস কিছুতেই হচ্ছেনা পেছন ফিরে তাকাতে, সবার মুখে শুনছি ভুতের নাম নিলে পেছন ফিরে তাকাতে নেই। বুকের ভেতরটা যেন কেমন একটা করছে, তবে চোখ বন্ধকরে পেছন ফিরে তাকালাম একবার, চোখ খুলতেই দেখি, উর্মিলা আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
#হেমন্ত :-কোথায় ছিলেন আপনি, আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিলেন তাই না। কেন আপনি এমন করছেন?
#উর্মিলা:-আমার হাঁপানো মুখটা দেখে আমাকে বলতে লাগলো কি হয়েছে আপনার আপনি আবার ভয় পেলেন নাকি। আপনার সামনে আমি মাথাঘুরে পরে গেলাম আর আপনি নাকি, আমাকে দেখতে পাচ্ছেন না, আপনার চোখ দুটো কি গেলো নাকি মশাই। আমার মনে হয় আপনার মাথার কোনো প্রবলেম আছে। আপনি একেবারেই স্বাভাবিক ব্যবহার করছেন না। তবে এই ট্রেনে কিছুতো একটা আছে; মাথাটা আমার এমন ভাবে ঘুরে গেলো; আর নিচে পরে গেলাম আমি। আর আপনিও আমাকে দেখতে পেলেন না। তাছাড়া এতগুলো স্টেশন চলে গেলো কেউ উঠলো না। কোই দিদিতো আমাকে এমন কিছুই বলেনি। সেতো বললো ভালোই, ভিড় হয় এই শেষ ট্রেনে; তবে এই ট্রেন ফাঁকা কোনো? কিছুতো একটা রহস্য আছে! এই পুরো গোটা ট্রেনে আপনি আর আমি শুধুই একা! এটা তো হতে পারে না! আর ট্রেনটাই বা থামছেনা কেন? আপনি সত্যি করে বলুনতো আপনি কে? আর এটা কোন ট্রেন?
#হেমন্ত :-দেখুন আমি হেমন্ত দাসগুপ্ত, আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে; আমিও আপনার মতো এই সকল প্রশ্নের কোনো উত্তর পাচ্ছিনা! আমার বিষয়টা সব কেমন যেন একটা গুলিয়ে যাচ্ছে।পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি, সেই তখন সাঁজের বেলা একটা মেয়ে হটাৎ করেই উধাও হয়ে গেলো। স্টেশন পৌছালাম, স্টেশন পুরো ফাঁকা কেউ নেই; তার পর হটাৎ করেই এই ফাঁকা রহস্যময় ট্রেন! তার উপর আপনার মতো একটা এত সুন্দরী নারী,তও আবার আমার সাথে এই ট্রেন যাত্রার, সঙ্গী! সব কেমন যেন একটা ধোঁয়াশা লাগছে। কি যে হচ্ছে কিছুই বুজতে পারছি না ।
#উর্মিলা:-তবে আর ভয় পেলে চলবে না। এই ফাঁকা ট্রেনের রহস্য আমাদের কেই বার করতে হবে। তবে কিছু যেন একটা মিস করছি আমরা, ভাবুন হেমন্ত বাবু ভাবুন! এ আমাদের কোনো কল্পনা নয়তো। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এই রহস্যময় ফাঁকা ট্রেন আমাদের?
#হটাৎ করেই মেঘ খুব গর্জে উঠলো, ট্রেনটাও থেমে গেলো আবারো কোনো ফাঁকা স্টেশনে। বুজলাম আবারো যদি অন্ধকার হয় তাই আগেই উর্মিলার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলাম। তার পর যা ভাবলাম তাই; আবার অন্ধকার হয়ে গেলো। তার পর হটাৎ করেই আলো, আলো আসতেই দেখি ট্রেন থেমে আছে এর যাচ্ছে না। আমরা দুজন নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে। তার পর যা ঘটলো তা যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। চোখের পলক ফেলতে ট্রেনটা হটাই উধাও হয়ে গেলো। চোখ যেন পুরো ধাঁধা। দেখি আমার আবার সেই স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু এখন এর স্টেশনে এর ফাঁকা নেই সব লোক আছে চারিদিকে। এক ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলাম এখন কোন ট্রেন আসবে; লোকটি হেসে হেসে উত্তর দিলো, কেন ১০টার শেষ ট্রেন আসবে এখন। কিছুই বুজতে পারছিলাম না। আমি উর্মিলার চোখের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম। এই কি সত্যি নাকি স্বপ্ন দেখছি, কোথায় গেলে ওই আদ্দি কালের মতো দেখতে ওই ট্রেনটা। আর যদিওবা ট্রেনটা মিথ্যা হয়, তবে উর্মিলা আমার পশে দাঁড়িয়ে আছে কি করে? রহস্য যেন ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ট্রেনটা গেলে কোথায়? তখনি হটাৎ দেখতে পেলাম বন্ধু প্রভাতকে।
#প্রভাত:- কি হেমন্ত ব্যাগটা যে বাড়ি ফেলে এসেছিলাম আমার, মনটা থাকে কোথায় তোর? আর হা করে কি দেখছিস আমার দিকে? আবার ভূত দেখলি নাকি ? কিরে কিছু বল? জানিস তুই ৯টা নাগাদ স্টেশনে এসেছিসরহস্য যেন ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ট্রেনটা গেলে কোথায়? তখনি হটাৎ দেখতে পেলাম বন্ধু প্রভাতকে। আমার বাড়ির ঘড়ি তা এক ঘন্টা ফাস্ট ছিল আমি আজ সকালে সময় মেলাতে গিয়ে ১ঘন্টা বাড়িয়ে ফেলেছিলাম ভুল করে তুইও বা একঘন্টা ধরে কি করছিলিস এখানে?
#হেমন্ত :-আমার যে কিছুই মাথায় ঢুকছেনা প্রভাত! আমায় বেঁচে আছিনা মরে গেছি আমি কিছু বুজতে পারছি না!
#তারপর সবকিছু খোলাসা করে বললাম প্রভাতকে, প্রভাত শুনে প্রায় হতভম্বো হয়ে গেলে। আমার কথা শুনে প্রভাত যা বললো তাতে নিজে যেন কেমন একটা পাগল পাগল মনে হয়ে লাগলো !
#প্রভাত:- প্রথমত হেমন্ত তোর সাথে এই খানে; শুধু আমি দাঁড়িয়ে আছি। কোথায় উর্মিলা কি অবলতাৰ বলছিস? কোথায় উর্মিলা আমিতো কোনো উর্মিলাকে দেখতে পারছিনা। আমার মতে হেমন্ত তোর শরীর ভালো নেই, চল তোকে আমি বাড়ি দিয়ে আসি।
#তারপর আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না। আমার গলার স্বর যেন কোথাও হারিয়ে গেছে, শুধু শুনে যাচ্ছি প্রভাত এর কথা, কোনো উত্তর নেই আমার মুখে। আরো বিস্মৃত হলাম যখন দেখলাম উর্মিলা আমার চোখের সামনে হারিয়ে গেলো। মিলে গেল অন্ধকারে; আমি সত্যি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ট্রেনটা চলে আসলো স্টেশনে; আমিও বন্ধুর সাথে উঠে পড়লাম ট্রেনে। সারা রাস্তা এর কিছুই বলতে পারলাম না। শুধু নির্বাক উপপাদ্য হয়ে থাকে গেলাম। বারবার উর্মিলাকে মনে পড়তে থাকলো, হয়তো ভালোবেসে ফেলেছিলাম উর্মিলাকে । এখন সব ঠিক আছে শুধু ঠিক নেই আমার মনটা। এ এখন অদ্ভুতপূর্ণ সময় আমার জীবন হতে বয়ে চলেছে। বারবার মনে হতে থাকলো কোথায় গেল ওই ফাঁকা ট্রেনটা এর কোথায় বা হারিয়ে গেল উর্মিলা। খুব যে মনে পড়ছে তাকে ; বারবার মনে হচ্ছে ভয়টাই হয়তো ভালো ছিল। কেনো নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে, কেনই বা ছেড়ে দিলাম উর্মিলার হাত। খুব কষ্ট হচ্ছে বুকের মধ্যে।
#আমার বন্ধুর মুখে উর্মিলার নাম এর ফাঁকা ট্রেনের রহস্য শুনে এক ভদ্রলোক বলে উঠলেন । আমি হয়তো বুজতে পেরেছি আপনার বন্ধুর কি হয়েছে। আজ থেকে অনেক বছর আগে এই লাইন এই শেষ ট্রেনে ধর্মঘটের দিন একটা মেয়ে তার দিদির বাড়ি থেকে তার বাড়ি ফিরছিলো হাওড়া যাবে বলে। সে দিন ট্রেনটা হাওড়া পৌঁছেছিল ঠিকই কিন্তু ওই ফলে কামরায় ছিল উর্মিলার লাশ। সেই থাকে এই ফাঁকা ট্রেনটা শুনেছি অনেকেই দেখছে । কিন্তু ট্রেনটা যে কোথায় উধাও হয়ে যায় সেটা কেউ জানে না।
#সত্যি হতো কেউ জানেনা ফাঁকা ট্রেনের রহস্য, শুধু জানলাম আমি। ঘটনার শেষ অধ্যায়ঃ এসে কিনা আমি একটি ভূতের প্রেমে পড়লাম। সত্যি হয়তো উর্মিলা ঠিক বলেছিলো! আমি একটা ভীতু কিন্তু আজ থেকে এর কোনো ভয় আমাকে ছুতে পারবে না। কারণ আজ থেকে আমি আর ভয় পাবো না। কারণ যে যায় বলুক আমি জানি উর্মিলা থাকবে আমার সাথে। ওই মেয়েটা অনেকে একটা জিনিস শিখিয়ে গেল যে, জীবনের যেখান পর্যায় যখন তুমি একা; সত্যি হয়তো তোমার পাশে কেউ নেই, তখন সত্যি একটা হাত আছে যা তোমাকে বাঁচার নতুন করে স্বপ্ন দেখায়। শুধু খুঁজে নিতে হয় সেই হাতটা। আমি ভয় ততক্ষনই পেয়েছি যতক্ষণ আমি নিজেকে একা মনে করছিলাম। কিন্তু যখন নিজেকে শক্ত করলাম আর চেপে ধরলাম উর্মিলার হাত তখন আমার সব ভয় চলে গেল। আমি সত্যি আজ একা নোই। আমার জানি আজ আমার কোনো ভয় নেই। চলে এলো হাওড়া স্টেশনে। প্রভাতকে নিয়ে চললাম আমার বাড়ি। খুব হালকা লাগছিলো মনটাকে। আবারো কাল অফিস যেতে হবে।
-সমাপ্ত -
-সমাপ্ত -
জানি গল্পটা শেষ করতে অনেক সময় নিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু তার জন্য আমি দুঃখিত।পারলে শ্রোতারা আমার ভুল ত্রটি মার্জনা করবেন।
(বলে রাখি গল্পটি পুরো পুরি আমার সাজানো চরিত্র এর সাথে বাস্তব জীবনের কোনো মিল নেই ইহা আমার সাজানো কাল্পনিক চরিত্র )
(বলে রাখি গল্পটি পুরো পুরি আমার সাজানো চরিত্র এর সাথে বাস্তব জীবনের কোনো মিল নেই ইহা আমার সাজানো কাল্পনিক চরিত্র )
No comments:
Post a Comment