ফাঁকা ট্রেনের রহস্য (শেষ পর্ব)
কবি বিশ্বাস (Ami Kobi Biswas Bolche)
কবি বিশ্বাস (Ami Kobi Biswas Bolche)
#কারেন্ট আসতেই দেখি মেয়েটা উধাও।কোথাও, নেই এইতো ছিল সামনে কোথায় যে উধাও হয়ে গেলো। এবার সত্যি সত্যি ভয়ে হাতপা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।কোথায় গেলো মেয়েটা। উর্মিলা আপনি কোথায় চলে গেলেন। আমাকে কি আবার ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছন বুঝি। দেখুন অনেক হয়েছে এই ছেলে মানুষই কোথায় আছেন দয়া করে বাইয়ে আসুন। আমি আপনাকে আর কিছু বলবো না। এবার দয়া করে বেরিয়ে আসুন। উর্মিলা, উর্মিলা আপনি কোথায় গেলেন(কাঁপতে কাঁপতে ভাবতে লাগলাম) তার হটাৎ-ই, ট্রেনটা খুব জোরে চলা সুর হলো। গম গম কি প্রচন্ড শব্দ যেন মনে হচ্ছে। চারিদিক ফেটে অন্ধকার আমাকে গ্রাস করতে আসছে।অনেক ক্ষণ হয়ে গেলো ট্রেনটা চলছে তো চলছে আর কোনো স্টেশন-ই আসছেনা, ভয় যেন আরো বেশি করে বেড়ে যাচ্ছে। তার পর হটাৎই শুনতে পেলাম একটা মেয়ের গলা! কে যেন একটা গান করছে, কিন্তু কোথাও তো কেউ নেই; ক্রমশ আওয়াজটা যেন আমার খুব কাছে আসছে; হটাৎ করে ঘাড়ের কাছে একটা গম্ভীর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি , গলা আবারো শুকিয়ে আসছে, বরে বরে শুনতে পাচ্ছি বাঁচও, বাঁচও ,বাঁচও আমাকে, খুব ভারী গলায় কেউ যেন বলছে আমাকে বাঁচও। আমার সাহস কিছুতেই হচ্ছেনা পেছন ফিরে তাকাতে, সবার মুখে শুনছি ভুতের নাম নিলে পেছন ফিরে তাকাতে নেই। বুকের ভেতরটা যেন কেমন একটা করছে, তবে চোখ বন্ধকরে পেছন ফিরে তাকালাম একবার, চোখ খুলতেই দেখি, উর্মিলা আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
#হেমন্ত :-কোথায় ছিলেন আপনি, আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিলেন তাই না। কেন আপনি এমন করছেন?
#উর্মিলা:-আমার হাঁপানো মুখটা দেখে আমাকে বলতে লাগলো কি হয়েছে আপনার আপনি আবার ভয় পেলেন নাকি। আপনার সামনে আমি মাথাঘুরে পরে গেলাম আর আপনি নাকি, আমাকে দেখতে পাচ্ছেন না, আপনার চোখ দুটো কি গেলো নাকি মশাই। আমার মনে হয় আপনার মাথার কোনো প্রবলেম আছে। আপনি একেবারেই স্বাভাবিক ব্যবহার করছেন না। তবে এই ট্রেনে কিছুতো একটা আছে; মাথাটা আমার এমন ভাবে ঘুরে গেলো; আর নিচে পরে গেলাম আমি। আর আপনিও আমাকে দেখতে পেলেন না। তাছাড়া এতগুলো স্টেশন চলে গেলো কেউ উঠলো না। কোই দিদিতো আমাকে এমন কিছুই বলেনি। সেতো বললো ভালোই, ভিড় হয় এই শেষ ট্রেনে; তবে এই ট্রেন ফাঁকা কোনো? কিছুতো একটা রহস্য আছে! এই পুরো গোটা ট্রেনে আপনি আর আমি শুধুই একা! এটা তো হতে পারে না! আর ট্রেনটাই বা থামছেনা কেন? আপনি সত্যি করে বলুনতো আপনি কে? আর এটা কোন ট্রেন?
#হেমন্ত :-দেখুন আমি হেমন্ত দাসগুপ্ত, আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে; আমিও আপনার মতো এই সকল প্রশ্নের কোনো উত্তর পাচ্ছিনা! আমার বিষয়টা সব কেমন যেন একটা গুলিয়ে যাচ্ছে।পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি, সেই তখন সাঁজের বেলা একটা মেয়ে হটাৎ করেই উধাও হয়ে গেলো। স্টেশন পৌছালাম, স্টেশন পুরো ফাঁকা কেউ নেই; তার পর হটাৎ করেই এই ফাঁকা রহস্যময় ট্রেন! তার উপর আপনার মতো একটা এত সুন্দরী নারী,তও আবার আমার সাথে এই ট্রেন যাত্রার, সঙ্গী! সব কেমন যেন একটা ধোঁয়াশা লাগছে। কি যে হচ্ছে কিছুই বুজতে পারছি না ।
#উর্মিলা:-তবে আর ভয় পেলে চলবে না। এই ফাঁকা ট্রেনের রহস্য আমাদের কেই বার করতে হবে। তবে কিছু যেন একটা মিস করছি আমরা, ভাবুন হেমন্ত বাবু ভাবুন! এ আমাদের কোনো কল্পনা নয়তো। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এই রহস্যময় ফাঁকা ট্রেন আমাদের?
#হটাৎ করেই মেঘ খুব গর্জে উঠলো, ট্রেনটাও থেমে গেলো আবারো কোনো ফাঁকা স্টেশনে। বুজলাম আবারো যদি অন্ধকার হয় তাই আগেই উর্মিলার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলাম। তার পর যা ভাবলাম তাই; আবার অন্ধকার হয়ে গেলো। তার পর হটাৎ করেই আলো, আলো আসতেই দেখি ট্রেন থেমে আছে এর যাচ্ছে না। আমরা দুজন নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে। তার পর যা ঘটলো তা যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। চোখের পলক ফেলতে ট্রেনটা হটাই উধাও হয়ে গেলো। চোখ যেন পুরো ধাঁধা। দেখি আমার আবার সেই স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু এখন এর স্টেশনে এর ফাঁকা নেই সব লোক আছে চারিদিকে। এক ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলাম এখন কোন ট্রেন আসবে; লোকটি হেসে হেসে উত্তর দিলো, কেন ১০টার শেষ ট্রেন আসবে এখন। কিছুই বুজতে পারছিলাম না। আমি উর্মিলার চোখের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম। এই কি সত্যি নাকি স্বপ্ন দেখছি, কোথায় গেলে ওই আদ্দি কালের মতো দেখতে ওই ট্রেনটা। আর যদিওবা ট্রেনটা মিথ্যা হয়, তবে উর্মিলা আমার পশে দাঁড়িয়ে আছে কি করে? রহস্য যেন ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ট্রেনটা গেলে কোথায়? তখনি হটাৎ দেখতে পেলাম বন্ধু প্রভাতকে।
#প্রভাত:- কি হেমন্ত ব্যাগটা যে বাড়ি ফেলে এসেছিলাম আমার, মনটা থাকে কোথায় তোর? আর হা করে কি দেখছিস আমার দিকে? আবার ভূত দেখলি নাকি ? কিরে কিছু বল? জানিস তুই ৯টা নাগাদ স্টেশনে এসেছিসরহস্য যেন ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ট্রেনটা গেলে কোথায়? তখনি হটাৎ দেখতে পেলাম বন্ধু প্রভাতকে। আমার বাড়ির ঘড়ি তা এক ঘন্টা ফাস্ট ছিল আমি আজ সকালে সময় মেলাতে গিয়ে ১ঘন্টা বাড়িয়ে ফেলেছিলাম ভুল করে তুইও বা একঘন্টা ধরে কি করছিলিস এখানে?
#হেমন্ত :-আমার যে কিছুই মাথায় ঢুকছেনা প্রভাত! আমায় বেঁচে আছিনা মরে গেছি আমি কিছু বুজতে পারছি না!
#তারপর সবকিছু খোলাসা করে বললাম প্রভাতকে, প্রভাত শুনে প্রায় হতভম্বো হয়ে গেলে। আমার কথা শুনে প্রভাত যা বললো তাতে নিজে যেন কেমন একটা পাগল পাগল মনে হয়ে লাগলো !
#প্রভাত:- প্রথমত হেমন্ত তোর সাথে এই খানে; শুধু আমি দাঁড়িয়ে আছি। কোথায় উর্মিলা কি অবলতাৰ বলছিস? কোথায় উর্মিলা আমিতো কোনো উর্মিলাকে দেখতে পারছিনা। আমার মতে হেমন্ত তোর শরীর ভালো নেই, চল তোকে আমি বাড়ি দিয়ে আসি।
#তারপর আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না। আমার গলার স্বর যেন কোথাও হারিয়ে গেছে, শুধু শুনে যাচ্ছি প্রভাত এর কথা, কোনো উত্তর নেই আমার মুখে। আরো বিস্মৃত হলাম যখন দেখলাম উর্মিলা আমার চোখের সামনে হারিয়ে গেলো। মিলে গেল অন্ধকারে; আমি সত্যি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ট্রেনটা চলে আসলো স্টেশনে; আমিও বন্ধুর সাথে উঠে পড়লাম ট্রেনে। সারা রাস্তা এর কিছুই বলতে পারলাম না। শুধু নির্বাক উপপাদ্য হয়ে থাকে গেলাম। বারবার উর্মিলাকে মনে পড়তে থাকলো, হয়তো ভালোবেসে ফেলেছিলাম উর্মিলাকে । এখন সব ঠিক আছে শুধু ঠিক নেই আমার মনটা। এ এখন অদ্ভুতপূর্ণ সময় আমার জীবন হতে বয়ে চলেছে। বারবার মনে হতে থাকলো কোথায় গেল ওই ফাঁকা ট্রেনটা এর কোথায় বা হারিয়ে গেল উর্মিলা। খুব যে মনে পড়ছে তাকে ; বারবার মনে হচ্ছে ভয়টাই হয়তো ভালো ছিল। কেনো নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে, কেনই বা ছেড়ে দিলাম উর্মিলার হাত। খুব কষ্ট হচ্ছে বুকের মধ্যে।
#আমার বন্ধুর মুখে উর্মিলার নাম এর ফাঁকা ট্রেনের রহস্য শুনে এক ভদ্রলোক বলে উঠলেন । আমি হয়তো বুজতে পেরেছি আপনার বন্ধুর কি হয়েছে। আজ থেকে অনেক বছর আগে এই লাইন এই শেষ ট্রেনে ধর্মঘটের দিন একটা মেয়ে তার দিদির বাড়ি থেকে তার বাড়ি ফিরছিলো হাওড়া যাবে বলে। সে দিন ট্রেনটা হাওড়া পৌঁছেছিল ঠিকই কিন্তু ওই ফলে কামরায় ছিল উর্মিলার লাশ। সেই থাকে এই ফাঁকা ট্রেনটা শুনেছি অনেকেই দেখছে । কিন্তু ট্রেনটা যে কোথায় উধাও হয়ে যায় সেটা কেউ জানে না।
#সত্যি হতো কেউ জানেনা ফাঁকা ট্রেনের রহস্য, শুধু জানলাম আমি। ঘটনার শেষ অধ্যায়ঃ এসে কিনা আমি একটি ভূতের প্রেমে পড়লাম। সত্যি হয়তো উর্মিলা ঠিক বলেছিলো! আমি একটা ভীতু কিন্তু আজ থেকে এর কোনো ভয় আমাকে ছুতে পারবে না। কারণ আজ থেকে আমি আর ভয় পাবো না। কারণ যে যায় বলুক আমি জানি উর্মিলা থাকবে আমার সাথে। ওই মেয়েটা অনেকে একটা জিনিস শিখিয়ে গেল যে, জীবনের যেখান পর্যায় যখন তুমি একা; সত্যি হয়তো তোমার পাশে কেউ নেই, তখন সত্যি একটা হাত আছে যা তোমাকে বাঁচার নতুন করে স্বপ্ন দেখায়। শুধু খুঁজে নিতে হয় সেই হাতটা। আমি ভয় ততক্ষনই পেয়েছি যতক্ষণ আমি নিজেকে একা মনে করছিলাম। কিন্তু যখন নিজেকে শক্ত করলাম আর চেপে ধরলাম উর্মিলার হাত তখন আমার সব ভয় চলে গেল। আমি সত্যি আজ একা নোই। আমার জানি আজ আমার কোনো ভয় নেই। চলে এলো হাওড়া স্টেশনে। প্রভাতকে নিয়ে চললাম আমার বাড়ি। খুব হালকা লাগছিলো মনটাকে। আবারো কাল অফিস যেতে হবে।
-সমাপ্ত -
-সমাপ্ত -
জানি গল্পটা শেষ করতে অনেক সময় নিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু তার জন্য আমি দুঃখিত।পারলে শ্রোতারা আমার ভুল ত্রটি মার্জনা করবেন।
(বলে রাখি গল্পটি পুরো পুরি আমার সাজানো চরিত্র এর সাথে বাস্তব জীবনের কোনো মিল নেই ইহা আমার সাজানো কাল্পনিক চরিত্র )
(বলে রাখি গল্পটি পুরো পুরি আমার সাজানো চরিত্র এর সাথে বাস্তব জীবনের কোনো মিল নেই ইহা আমার সাজানো কাল্পনিক চরিত্র )
No comments:
Post a Comment